Header Ads

Header ADS

তৃতীয় কালেমা হচ্ছে কালেমায়ে তাওহীদ

তৃতীয় কালেমা হচ্ছে কালেমায়ে তাওহীদ, যার অর্থ হল "একাত্ববাদ" — এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কালেমা, যা আল্লাহর একত্ব বা তাওহীদ বিশ্বাসের পরিচায়ক। "তাওহীদ" শব্দটি আরবি শব্দ "ওহাদ" থেকে এসেছে, যার অর্থ একক বা একমাত্র। অর্থাৎ, তাওহীদ হল আল্লাহর একত্ব বিশ্বাস করা, অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য বা শক্তি নেই।

কালেমায়ে তাওহীদ এর পূর্ণ বাক্য: ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহিদাল লা ছানিয়ালাকা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহি ইমামুল মুত্তাক্বীনা রাসুলু রাব্বিল আলামীন। অর্থ: তুমি (আল্লাহ) ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। তুমি এক, তোমার দ্বিতীয় কেহ নেই।আল্লাহর রাসুল (সা.) আল্লাহভীরুদের নেতা ও বিশ্বপ্রতিপালকের রাসূল।

এই কালেমা ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বাক্যগুলির মধ্যে একটি, যা মুসলিমদের আস্থা ও বিশ্বাসের মূল ভিত্তি।

কালেমায়ে তাওহীদ এর মানে:

তাওহীদ (একত্ববাদ):

"তাওহীদ" মানে হলো আল্লাহর একত্বের প্রতি বিশ্বাস। এটি বিশ্বাসের মূল ভিত্তি, যা ইসলামের অন্যতম মৌলিক আকিদা। মুসলিমরা এই কালেমা উচ্চারণের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর অস্তিত্ব, তাঁর এককত্ব, এবং তাঁর কোনো শরিক বা সহকারী নেই — এর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আনুগত্য প্রকাশ করে।

শিরক থেকে মুক্তি:

এই কালেমা মুসলিমদের শিরক (অন্য দেবতা বা শক্তির worship) থেকে মুক্ত রাখে। এটি ইসলামের শিরক বিরোধী বিশ্বাসের প্রমাণ, যেখানে একমাত্র আল্লাহর worship ও আনুগত্য করা হয়। তাওহীদ বিশ্বাসের মাধ্যমে মুসলিমরা বুঝতে পারে যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য বা শক্তি নেই।

অন্য কোনো শক্তি বা সত্তার অস্তিত্ব অস্বীকার:

কালেমা তাওহীদ মুসলিমদের শেখায় যে আল্লাহ একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, সবকিছু তাঁর ইচ্ছায় ঘটে এবং সমস্ত সৃষ্টির ওপর তাঁর একক শাসন রয়েছে। কোনো সৃষ্টি বা প্রাকৃতিক শক্তি আল্লাহর বিরুদ্ধে বা আল্লাহর বাইরে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম নয়।

তাওহীদ এর শ্রেণী:

ইসলামিক তত্ত্বে তাওহীদকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়:

তাওহীদ-আল-রুবুবিয়াহ (আল্লাহর একক সত্ত্বা):

এই ধরনের তাওহীদে বিশ্বাস করা হয় যে, আল্লাহই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, তিনি সমস্ত সৃষ্টি পরিচালনা করেন এবং সমস্ত কিছুর ওপর তাঁর একক কর্তৃত্ব রয়েছে। তাঁর শাসন ছাড়া কিছুই ঘটে না।

তাওহীদ-আল-উলুহিয়াহ (আল্লাহর একক উপাস্য):

এর মাধ্যমে বিশ্বাস করা হয় যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য বা ইবাদতের যোগ্য নেই। সমস্ত ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য এবং তাঁকেই একমাত্র উপাস্য হিসেবে মেনে নেয়া হয়।

তাওহীদ-আল-আসমা ওয়াস-সিফাত (আল্লাহর নাম ও গুণাবলী):

এই ধরনের তাওহীদে বিশ্বাস করা হয় যে, আল্লাহর সমস্ত নাম এবং গুণাবলী একমাত্র তাঁরই জন্য উপযুক্ত। আল্লাহর গুণাবলী বা নাম কখনো কোন সৃষ্টির সাথে মিলিয়ে দেখার উপায় নেই, এবং তা সম্পূর্ণ আল্লাহর বিশেষত্ব।

কালেমায়ে তাওহীদের গুরুত্ব:

ইসলামের মৌলিক ভিত্তি:

তাওহীদ ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, কারণ এটি মুসলিমদের বিশ্বাসের মূল ভিত্তি। একমাত্র আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও তাঁর এককত্ব মেনে চলা ইসলাম ধর্মের প্রাণ।

ঈমানের শুদ্ধতা:

কালেমায়ে তাওহীদ মুসলিমদের ঈমানকে শুদ্ধ ও সঠিক রাখতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে একজন মুসলিম স্বীকার করে যে, তিনি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো শক্তির উপাসনা বা ইবাদত করবেন না।

সঠিক দিকনির্দেশনা:

তাওহীদ বিশ্বাস মুসলিমদের সঠিক পথ দেখায়, যাতে তারা নিজেদের জীবন আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত করে। এর মাধ্যমে তাদের আধ্যাত্মিক জীবন শুদ্ধ হয় এবং তারা সর্বদা আল্লাহর রহমত এবং সাহায্য পেতে সক্ষম হয়।

শিরক মুক্ত জীবন:

কালেমায়ে তাওহীদ মুসলিমদের শিরক (মূর্তিপূজা বা অন্য দেবতা বা শক্তির worship) থেকে রক্ষা করে। মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, একমাত্র আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কিছু ঘটতে পারে না। এর মাধ্যমে তারা সমস্ত মূর্তিপূজা বা অন্য কোনো প্রকারের শিরক থেকে নিজেদের রক্ষা করে।

কালেমায়ে তাওহীদ এর প্রভাব:

নামাজে এবং দোয়ায় গুরুত্ব:

কালেমায়ে তাওহীদ মুসলিমদের প্রতিদিনের নামাজ ও দোয়ায় উল্লেখ করা হয়। নামাজে মুসলিমরা তাওহীদ বিশ্বাসের গুরুত্ব উপলব্ধি করে, এবং তাদের জীবনকে একমাত্র আল্লাহর দিকে নিবেদিত করে।

ধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা:

এই কালেমা মুসলিমদের মধ্যে একটি ধর্মীয় ঐক্য সৃষ্টি করে, কারণ সব মুসলিম একই বিশ্বাস ও আদর্শে অবিচল থাকে। তারা একমাত্র আল্লাহকে পূজা করে, এবং মুহাম্মদ (সাঃ)-এর রাসূলিয়াত মেনে চলে।

পুনঃজন্মের এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি:

তাওহীদ মুসলিমদের আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার পথ প্রদর্শন করে, কারণ এটি তাদের আত্মার পরিত্রাণের জন্য উপযুক্ত বিশ্বাস হিসেবে কাজ করে। যখন একজন মুসলিম জীবনে তাওহীদ বিশ্বাসে দৃঢ় থাকে, তখন আখিরাতে সে আল্লাহর রহমত এবং সাহায্য আশা করতে পারে।

তাওহীদের শিক্ষাগুলি:

আল্লাহ ছাড়া কোনো দেবতা নেই।

আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি বা উপাস্য নেই।

আল্লাহ একমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং সকল শক্তির মালিক।

এমনকি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মতো সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রাসূলও আল্লাহর শরিক বা সহযাত্রী নয়।

এটি একজন মুসলিমের আধ্যাত্মিক জীবন ও বিশ্বাসের মূল ভিত্তি।

উপসংহার:

কালেমায়ে তাওহীদ মুসলিম জীবনের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আল্লাহর একত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি মুসলিমদের পূর্ণ বিশ্বাস এবং সম্মান প্রদর্শন করে। এটি মুসলিমদের ঈমানের মূল ভিত্তি এবং তাদের আধ্যাত্মিক জীবনের শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করে, যা আল্লাহর প্রতি তাদের অনুগত্য ও আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত করে।


No comments

Powered by Blogger.