ইয়াজুজ–মাজুজের প্রকৃতি ও অবস্থান
১. ইয়াজুজ–মাজুজের প্রকৃতি:
ইয়াজুজ-মাজুজের প্রকৃতি অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক এবং অশান্তি সৃষ্টিকারী। তাদেরকে এমন একটি জাতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে যারা মানবসভ্যতা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি অশুভ মনোভাব পোষণ করে। তারা মানুষের জীবনে বিশাল ক্ষতি এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। তাদের সংখ্যা অগণিত এবং তাদের আগমন পৃথিবীজুড়ে বিশাল বিপর্যয়ের কারণ হবে।
হাদীসে বলা হয়েছে:
"ইয়াজুজ-মাজুজ যখন বের হবে, তারা পৃথিবীজুড়ে অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং যেখানেই যাবে, সেখানেই ধ্বংসের পথ সৃষ্টি করবে।" (সহীহ মুসলিম)
এছাড়া, তারা একটি অতি শক্তিশালী জাতি, যারা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং পৃথিবীজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। তাদের অস্তিত্ব এবং শক্তির চিত্র এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, তাদের সঙ্গে লড়াই করা মানুষের জন্য অসম্ভব হবে।
২. ইয়াজুজ–মাজুজের অবস্থান:
ইয়াজুজ-মাজুজের অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য কুরআন ও হাদীসে উল্লেখিত হয়নি, তবে কিছু তাত্ত্বিক ধারণা এবং ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
কুরআনে তাদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে:
কুরআনের সূরা কাহাফ (18:93-97) তে বলা হয়েছে যে, দুল-কারনাইন (একটি শক্তিশালী শাসক) ইয়াজুজ-মাজুজদের একটি প্রাচীর দিয়ে আটকে রেখেছিলেন, যা তারা কিয়ামতের দিন ভেঙে ফেলবে। এই প্রাচীরটি ছিল একটি শক্তিশালী বাধা যা ইয়াজুজ-মাজুজের আগমন এবং তাদের পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়াকে প্রতিরোধ করেছিল।
কুরআনে বলা হয়েছে:
"সে (দুল-কারনাইন) বলল, 'আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তা-ই যথেষ্ট। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব।'" (সূরা কাহাফ, আয়াত 94)
স্থান সম্পর্কে কিছু তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা:
তবে তাদের অবস্থান সম্পর্কে কিছু তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা রয়েছে, যেমন:
কিছু ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন যে, ইয়াজুজ-মাজুজ পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলে বা এশিয়ার শীতল অঞ্চলে বসবাস করে।
অন্য কিছু তাত্ত্বিকদের মতে, তারা পৃথিবীর এমন কোনো অঞ্চলে বসবাস করতে পারে যেখানে মানুষের পক্ষে পৌঁছানো সম্ভব নয়, যেমন পর্বত বা বরফাবৃত এলাকা।
৩. ইয়াজুজ–মাজুজের অবরুদ্ধ অবস্থান:
একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল যে, ইয়াজুজ-মাজুজকে একটি প্রাচীর বা বাধার মাধ্যমে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এটি কুরআন এবং হাদীসে বর্ণিত একটি বিশেষ ঘটনাকে নির্দেশ করে, যেখানে দুল-কারনাইন নামক এক শাসক তাদের একটি বিপদজনক জাতি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে একটি শক্তিশালী বাধা গড়ে তোলেন। তবে, কিয়ামতের সময় সেই বাধাটি ভেঙে যাবে, এবং তখন তারা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
৪. ইয়াজুজ–মাজুজের বিস্তার:
ইয়াজুজ-মাজুজের মুক্তির পর, তারা পৃথিবীজুড়ে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং পৃথিবীজুড়ে বিশাল অশান্তি সৃষ্টি করবে। হাদীসে তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে বলা হয়েছে:
"ইয়াজুজ-মাজুজ যখন বের হবে, তারা পৃথিবীজুড়ে অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং তারা যেখানেই যাবে, সেখানেই ধ্বংসের পথ সৃষ্টি করবে।" (সহীহ মুসলিম)
এটি ইঙ্গিত দেয় যে, তাদের আগমনের পর পৃথিবীজুড়ে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে এবং পৃথিবীকে তারা ধ্বংস করে ফেলবে।
উপসংহার:
ইয়াজুজ-মাজুজের প্রকৃতি এবং অবস্থান সম্পর্কে কুরআন এবং হাদীসে কিছু নির্দেশনা পাওয়া গেলেও তাদের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে তাদের মুক্তি কিয়ামতের এক বড় নিদর্শন হিসেবে গণ্য এবং তাদের কার্যকলাপ পৃথিবীজুড়ে বিশাল বিপর্যয়ের কারণ হবে।
No comments