আবুল আলা মওদূদীর প্রতিষ্ঠান জামায়াত বনাম ইসলাম
আবুল আলা মওদুদী (১৯০৩-১৯৭৯) পাকিস্তান ভিত্তিক দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা। যা বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই তাদের ধর্ম ব্যবসা খুলে বসেছে। প্রথম দিকে মওদূদী পাকিস্তান রাষ্ট্র বিরোধীতা করলেও ১৯৪০ এর দশকে এসে নিজের ভোল পাল্টায় এবং তখন থেকেই সে পাকিস্তানে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। সে ইসলামকে একটি জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে প্রচার করতে শুরু করে। ইসলামের মৌলিক নীতি ও ভিত্তিসমূহ উপেক্ষা করে মওদূদী শাসন ব্যবস্থা ও মওদুদীবাদ প্রচারের ওপর বেশী জোর দেয়। মওদুদী বলেন, “শাসন ও কর্তৃত্ব করার নামই হচ্ছে ধর্ম, শাসন ব্যবস্থার আইন হলো শরিয়া এবং উপাসনা হচ্ছে শাসন ব্যবস্থার এতিহ্যকে অনুসরন করা।”
আবুল আলা মওদুদী সূচিত এই সংগঠনটির মূল নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। ১৯৪১ সালের ২৬ আগষ্ট এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারী জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মওদুদী সহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের একজন।
১৯৪১ সালের ২৬ আগষ্ট লাহোরে তার এ ভ্রান্ত মতবাদকে রাষ্ট্রীয়রূপ দেওয়ার দৃঢ় পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠা হলো জামায়াতে ইসলাম নামক একটি সংগঠন। তারই খাস ভক্ত ও অনুসারী হিসেবে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী সদস্য তথা গোলাম আযম, নিজামী ও সাঈদী প্রমুখগণ তাদের মনগড়া আক্বিদা ইসলামের নামে প্রচার করতে থাকে। এ সমস্ত আক্বিদা আমাদের জন্য ঈমান বিধ্বংসী আক্বিদা। নিন্মে সেরকম কিছু আক্বিদা আলোকপাত করার চেষ্টা করছি।
(১) জামাতি আক্বিদা --→ লোকে সাধারণত বলে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ: কালিমা, নামাজ, যাকাত, রোজা এবং হজ। আর এ গুলোই ইসলাম। এ ভুল ধারণার মধ্যে তারা অনেকদিন ধরে আছে। আসলে এটা একটা বড় বিভ্রান্তি যা মুসলমানদের পথ এবং কর্মকে ধ্বংস করছে। (সূত্রঃ কাউসার, ৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৩- মওদুদীর ভাষন)
ইসলামী আক্বিদা --→ অথচ সহীহ হাদীস সমূহে স্পষ্ট উল্লেখ আছে ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি। যথা: কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত। (বুখারী ও মুসলিম)
(২) জামাতি আক্বিদা--→যুদ্ধবন্দী মহিলাদের ব্যাপারে মওদুদীর মতামত হলো “এমনকি বর্তমান যুগেও যুদ্ধবন্দী মহিলাদেরকে সৈনিকদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া উচিৎ এবং সৈন্যদেরকে তাদের (মহিলাদের) ভোগ করার অনুমিত দেয়া উচিৎ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলার জামাতিরা এই ফতোয়া দিয়েছিল।
ইসলামী আক্বিদা --→ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “অবশেষে যখন তাদেরকে (কাফিরদের) পূর্ণরূপে পরাভূত কর, তখন তাদেরকে শক্ত করে বেঁধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও।” (সুরা মুহাম্মদ-৪)
(৩) জামাতি আক্বিদা--→“কিছু মানুষ ধারণা পোষন করে যে হযরত ইউসুফ (আ:) মিশরের তত্বাবধায়কের দায়িত্ব চেয়েছিলেন শুধু সেখানকার অর্থমন্ত্রী হবার জন্য, তা আসলে ঠিক নয়। প্রকৃত পক্ষে তিনি একজন সৈরশাসক হতে চেয়েছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত ইউসুফ (আ:) যে পদ পান তা বর্তমানকালের ইতালির মুসোলিনীর অবস্থার সমতুল্য।” (তাহফিমাত, ২য় খন্ড, ১২২ পৃষ্ঠা, ৫ম সংস্করণ)
ইসলামী আক্বিদা --→ নবীগণ মানুষের জন্য রহমতস্বরূপ। তাঁরা কোনভাবেই অপরের ক্ষতি করেন না। একজন নবী কখনই সৈরশাসক হতে পারেন না (নাউযুবিল্লাহ)। কোন ব্যক্তি সে মওদুদীই হোক না কেন, সে যদি বিশ্বাস করে যে, কোন নবী সৈরশাসক, তাহলে তাঁর ঈমান থাকবে না।
(৪) জামাতি আক্বিদা--→আল্লাহ তা’য়ালা স্বেচ্ছায় মাঝে মধ্যে নবীগণকে দিয়ে পদস্থলন ঘটান। (সূত্রঃ মওদূদী লিখিত ‘কুরআন কি চার বুনিয়াদি এস্তেলাহ’ ও ‘তাফহিমাত’)
ইসলামী আক্বিদা--→ আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম আজন্ম নিষ্পাপ। ছোট বড়, ইচ্ছাকৃত অনিচ্ছাকৃত- সকল পাপ থেকে তাঁরা মুক্ত। (আল কুরআন, আকায়েদ ও মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া)। নবীগণ পাপ করলে উম্মতের জন্য তা ওয়াজিব হয়ে যেত। পাপী ও অপরাধীর কোন সাক্ষ্য আদালতে গ্রহণযোগ্য হয় না। নবীগণের সাক্ষ্য চূড়ান্ত সত্য ও গ্রহণযোগ্য। সুতরাং তাঁরা নিষ্পাপ। হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর গন্ধম খাওয়া খেলাফে আওলা, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম-এর তারকা, চন্দ্র ও সূর্যকে খোদা বলা স্বীকৃতি মূলক ছিল না বরং প্রশ্নবোধক। তাঁর জাতির কথাই তাঁর জবানে প্রশ্নবোধক হয়ে প্রকাশ হয়েছিল। এটি তাঁর কথা নয়। (সূত্রঃ তাফসীরে নাঈমী)
(৫) জামাতি আক্বিদা--→নবী করীম সাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মতই একজন সাধারণ মানুষ। তবে পার্থক্য শুধু একটি বিষয়ে, তা হচ্ছে- তাঁর কাছে ওহি আসতো, কিন্তু আমাদের কাছে আসে না। (সূত্রঃ অধ্যাপক গোলাম আযমের সিরাতুন্নবী সংকলন, পৃষ্ঠা-১০)
ইসলামী আক্বিদা --→ নবী করীম সাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু আবরণে আমাদের মত মানবজাতি। কিন্তু অন্যসব বিষয়ে আমাদের মত নন। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। আল্লাহর পরেই তিনি বুজুর্গতরীন। তাঁর মধ্যে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বাহ্যতঃ ২৭টি ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। নবী করীম সাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুরত বা রূপ তিনটি। যথা ১) সুরতে বাশারী বা মানবীয় রূপ ২) সুরতে মালাকী বা ফেরেস্তার রূপ এবং ৩) সুরতে হাক্কী বা আল্লাহর সিফাতি রূপ। শেষোক্তটি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ এবং খুবই সূক্ষ। (সূত্রঃ তাফসীরে রূহুল বয়ান)
(৬) জামাতি আক্বিদা--→‘গাউসূল আ’যম’ অর্থ বড় সাহায্যকারী। আল্লাহই হচ্ছেন বড় সাহায্যকারী। অন্য কাউকে গাউসূল আ’যম বলা পরিস্কার শিরক। (দেলওয়ার হুসাইন সাঈদীর ওয়াজের ক্যাসেট)
ইসলামী আক্বিদা --→ গাউসূল আ’যম উপাধী হচ্ছে বড়পীর শায়খ সাইয়্যেদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদের জিলানী রাদিয়ালাহু তা’য়ালা আনহুর। নবী করীম সাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত উপাধী সত্যায়ণ করেছেন স্বপ্নের মাধ্যমে। উক্ত উপাধী ওলি আল্লাহগণের মধ্যে উপাধী। ইসমাইল দেহলভী ও মৌলভী আশরাফ আলী থানভী বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী রাদিয়ালাহু তা’য়ালা আনহু-কে গাউসূল আ’যম বলে স্বীকার করেছেন (সূত্রঃ সিরাতুল মুস্তাকিম ও ফতুয়ায়ে আশ্রাফিয়া)। আল্লাহর ৯৯ নামের মধ্যে গাউসূল আ’যম নেই। অন্যদিকে আ’লা শব্দটি আল্লাহর গুণবাচক নাম। যেমন সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা। মওদূদীর নাম আবুল আ’লা- যার শাব্দিক অর্থ মহান আল্লাহর পিতা। এবার সাঈদী সাহেব কি ফতোয়া দিবেন? অর্থগত দিক দিয়েতো আবুল আ’লা হলো খোদার বাপ। (নাউযুবিল্লাহ)
(৭) জামাতি আক্বিদা --→ নবীজী অপরের কল্যাণ অকল্যাণ তো দূরের কথা, নিজেরও কোন কল্যাণ-অকল্যাণ করতে অক্ষম-নাউযুবিল্লাহ। (সূত্রঃ মওদূদীর লন্ডনের ভাষণ, পৃষ্ঠা-১১)
ইসলামী আক্বিদা --→ অথচ হাদীস শরীফে এসেছে- রোজ-হাশরে নবী করীম সাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শাফায়াত ব্যতিত কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। সে কারণেই আল্লাহ তা’য়ালা তাঁকে ‘শাফিউল মুজনাবিন’ খেতাব প্রদান করেছেন।
(৮) জামাতি আক্বিদা --→ মওদূদী সাহেব সূরা নসর এর ﻭﺴﺗﻐﻔﺮﻩ (ওয়াসতাগফির) এ আয়াতটির ব্যাখ্যায় লিখেছেন-‘ (হে নবী!) আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থণা কর। তাঁর নিকট কাতর কন্ঠে এ দোয়া কর যে, তোমাকে যে কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে তোমার (রাসূলে করীমের) দ্বারা যে ভুল-ত্রুটি হয়েছে কিংবা তাতে যে অসম্পূর্ণতা ও দুর্বলতা রহিয়া গিয়াছে, তা যেন তিনি (আল্লাহ তা’য়ালা) ক্ষমা করে দেন।’ (সূত্রঃ বাংলা তাফহীমুল কুরআন-শেষ খন্ড, অনুবাদক-মৌঃ আবদুর রহীম)
ইসলামী আক্বিদা --→ মওদূদীর উপরোক্ত ব্যাখ্যাটি তার নিছক নিজস্ব, কল্পিত ও মনগড়া। তার এ ব্যাখার সাথে নবীজির জীবনীর কোন মিল নেই। কেননা নবীজি যদি ভুল-ত্রুটি করে থাকেন (নাউযুবিল্লাহ) তাহলে বুঝা যায় ইসলামের মধ্যেও ভুল-ত্রুটি আছে। এছাড়া অন্যান্য স্বনামধন্য তাফসীর যেমন, তাফসীরে ইবনে আব্বাস, তাফসীরে জাল্লাইন, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে রুহুল বয়ানসহ অন্যান্য মশহুর তাফসীর গ্রন্থের সাথে কোন মিল নেই। হাদীস শরীফে হুযুর পাক সাল্লালাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি (তাফসীর করার নিয়ম-নীতি না জেনে) নিজ মনগড়া কুরআনের তাফসীর করে সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে ঠিক করে নেয়।’ (সূত্রঃ তাফসীর শাস্ত্র পরিচিত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘হে আমার হাবীব! আপনি আপনার মহান রবের তাসবীহ, তাহলিল এবং উম্মতের জন্য মাগফিরাতে দোয়ায় বেশি করে মশগুল হয়ে যান। কেননা তখন আপনার ওফাত শরীফ সন্নিকটে।’ হুযুর সাল্লালাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াসালামের ইস্তেগফার হয় তো উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য নতুবা নিজের গুনাহগার উম্মতের জন্যই। অন্যথায় হুযুর তো গুনাহ্ থেকে নিষ্পাপ। (সূত্রঃ কানযুল ঈমান ও তাফসীরে নূরুল ইরফান ২য় খন্ড পৃষ্টা-১৬৮৮)
(৯) জামাতি আক্বিদা--→রাসূল না অতি মানব, না মানবীয় দুর্বলতা থেকে মুক্ত। (মওদূদীর লন্ডনের ভাষন, পৃ-১১, গোলাম আযমের উক্তি)
ইসলামী আক্বিদা --→ বাংলা অভিধানে ‘অতি মানব’ বলতে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন মহাপুরুষ বুঝিয়েছে। অলৌকিক ক্ষমতা অর্থাৎ ‘মু’জিজা’। বুঝা গেল মওদূদী সাহবে নবীজির মু’জিজাকে অস্বীকার করে। অথচ তাঁর অসংখ্য মু’জিজা পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। যুদ্ধের ময়দানে হযরত ওয়াকাশা (রাঃ) এর তলোয়ার ভেঙ্গে গেল। তিনি নবীজির নিকট আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার তলোয়ার ভেঙ্গে গেছে। নবীজি বললেন তুমি একটা ডাল নিয়ে আস। হযরত ওয়াকাশা একটি ডাল নবীজির হাত মুবারকে দিলেন। নবীজি বললেন নাও আমি তোমাকে তলোয়ার দিলাম। সাথে সাথে ডালটি তলোয়ারে পরিণত হলো। (মাদারেজুন নবুয়াত-মুহাদ্দেস আব্দুল হক দেহলভী)
“মানবীয় দুর্বলতা” এমন একটি বিষয় যার শিকার হয়ে মানুষ লোভ-লালসা, অন্যায়, অবিচার, জোর-জুলুম, পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, আত্মসাৎ ইত্যাদি ইসলামের নীতি বিরোধী কাজ করে বসে। কিন্তু নবীজি ছিলেন সমস্ত মানবীয় দুর্বলতার উর্দ্ধে। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘খুলুকুন আজিম’ অর্থাৎ আপনাকে মহান চরিত্রের অধিকারী করে পাঠিয়েছি। রাসূলের কবি যাকে বলা হয় তিনি হচ্ছেন হযরত হাসসান বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু মসজিদে নবববীতে তাঁর জন্য তেরি মিম্বরে দাঁড়িয়ে সুউচ্চ কন্ঠে নবীজি ও সাহাবাকেরাম গণের উপস্থিতিতে নবীজির মানে প্রশংসামূলক না’ত (স্তুতিবাক্য) পাঠ করেন।
প্রিয় নবীজির শানে রচিত কবি হযরত হাস্সান বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু-এর কিছু অপূর্ব না’ত নিম্নে তুলে ধরা হলো। যেমন : ওয়াআসানু মিন্কা লাম্ তারা ক্বাত্তু আইনী, ওয়াআজ্মালু মিন্কা লাম তালিদিন্নিসা-উ, খুলিক্বতা মুর্বারায়ান মিন্ কুলি¬ আ’য়বিন্, কায়ান্নাকা ক্বাদ খুলিক্বতা কামা তাশা-উ। (দিওয়ানে হাস্সান বিন সাবিত, পৃষ্ঠা-৬৩)
(১) হে রাসূল! আপনার মত সুন্দর ও সুশ্রী আমার দু’নয়নে আর কাউকে দেখিনি। কেননা এমন সুন্দর ও সুশ্রী কোন জননী প্রসবও করেনি।
(২) আপনাকে সকল দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত করে সৃষ্টি করা হয়েছে ঠিক যেরূপ আপনি নিজেই ইচ্ছা (কামনা) করেছিলেন ঠিক সে রকমই। (সূত্রঃ দিওয়ানে হাস্সান বিন সাবিত)
পাঠক ভাইয়েরা! দেখুন সাহাবা কেরামগণের দৃষ্টিতে ও কুরআন অনুযায়ী নবীজি দোষ-ত্রুটি মুক্ত। অথচ নবীকূল শিরমনি, মওদূদী ও গোমাল আযমের চোখে মানবীয় দুর্বলতা থেকে উর্দ্ধে নয় (নাউযুবিল্লাহ)। সাবধান! না বুঝে আমরা কোন 'ইসলামে' ধাবিত হচ্ছি।
(১০) জামাতি আক্বিদা --→ ইসলামে শব-ই বরাতের কোন অস্তিত্ব নেই। ইহা সম্পূর্ণ বিদআত। শরিয়তে শব-ই বরাতের কোন গুরুত্ব ও জায়গা নেই। (গোলাম আযমের উক্তি, দেলোয়ার হুসাইন সাঈদীর ওয়াজ এবং ১৩/০৩/১৯৯৪ইং সালের ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় সাঈদীর উক্তি)
ইসলামী আক্বিদা --→ ইসলামে শব-ই বরাতের অস্তিত্ব আছে, ইহা কোন নতুন বিষয় নয়। আরবী শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে শব-ই বরাত নামে অভিহিত করা হয়েছে। পবিত্র আল কুরআনে একে ’লাইলাতুল মুবারক’ তথা বরকতময় রাত নামে পরিচয় দেয়া হয়েছে। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত নবী করিম, যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী (শব-ই বরাতের) আগমন হয়, তখন তোমরা ঐ রাত্রিতে জাগ্রত থেকে ইবাদত কর এবং দিনের বেলায় রোজা রাখ। (ইবনে মাজাহ)
হাদীসে শব-ই বরাত সম্পর্কে স্পষ্ট আলোচনা থাকলে সাঈদী তার বয়ানে বলেন না। অথচ তিনি একটি কিতাব লিখেছেন যার নাম ‘নাজাতের পথ’। সেই কিতাবের মধ্যে শব-ই বরাতের নামাজের নিয়ত ও নিয়ম-কানুন লিখেছেন। এবার প্রশ্ন সাঈদী ওয়াজে বলেন
শব-ই বরাত নাই অথচ কিতাবে বলেন আছে। ইহা মুনাফেকী নয়?
(১১) জামাতি আক্বিদা --→ নবীজির রওয়াজা মুবারক জিয়ারত করা শিরক। (ইবনে তাইমিয়া ও মওদুদী)
ইসলামী আক্বিদা --→ দুনিয়ার সমস্ত মাজারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মাজার হলো নবীজী (সাঃ) এর রওজা মোবারক। রওজা মোবারক জিয়ারত ও জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা খুবই পূণ্যের কাজ। এ কাজের বিনিময়ে হুজুর (সাঃ) এর শাফায়ত অবধারিত। ইমাম তকিউদ্দিন সুবুকী (রহঃ) তার লিখিত ‘শিফউস সিকাম’ গ্রন্থে বলেছেন, শুধু রওজা মোবারকের উদ্দেশ্যে সফর করা ও জিয়ারত করা উত্তম ইবাদত এবং নৈকট্য লাভের উত্তম পন্থা। যেমন নবী করীম সাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ﻤﻦ ﺯﺍﺭ ﻗﺑﺮﻯ ﻮﺟﺒﺖ ﻠﻪ ﺷﻓﺎ ﻋﺘﻰ (ﺮﻮﺍﻩ ﺍﻠﺪﺍﺮﻗﻃﻨﻰ ﻮﺍﻠﺒﻴﻬﻗﻲ (মান জারা কবরি ওয়াজাবাতল্লাহু শাফায়াত- দারে কুতনী ও বায়হাকী) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আমার রওজা মোবারক জিয়ারত করবে, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) হয়ে যাবে।” উপরোক্ত হাদীস শরীফ হতে প্রতীয়মান হয় যে, নবীজী (সাঃ) এর রওজা মোবারক জেয়ারত করা নিঃসন্দেহে জায়েজ ও পূণ্যের কাজ। অতএব, যারা বলবে নবীজির রওয়াজা মুবারক জিয়ারত করা শিরক, তাদের ঈমান থাকার কথা নয়।
শ্রদ্ধেয় পাঠকবৃন্দ! উপরে বর্ণিত ধারাবাহিক প্রামান্য তুলনামূলক ছক থেকে জামাতিদের স্বরূপ আমাদের সম্মুখে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। উল্লেখিত জামাতি আক্বিদা গুলো সাধারণ মানুষের নিকট অপরিচিত থাকলেও তাদের লিখিত কিতাব গুলোই এর সাক্ষ্য বহন করে। এদের আরও অনেক কুফরী আক্বিদা ও মতবাদ রয়েছে যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে ও তাদের ঈমানকে ভাওতা দিয়ে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
উপরোক্ত আলোচনা প্রতীয়মান হয় যে, প্রকৃত ইসলামের সাথে জামায়াতে ইসলামীর কোন মিল নেই। ইহা মানুষকে ‘সিরাতাল মুস্তাকিম’ এর পথ থেকে বিচ্যুতি করার নতুন পন্থা। যা আউলিয়ায়ে কেরামের কথা ও কাজের সাথে কোন সামঞ্জস্য রাখে না। তাই জামায়াতে ইসলামী কোনভাবেই প্রকৃত ইসলামের অনুসারী নয়। এরা ব্রিটিশের দালাল আব্দুল ওহাব নজদীর অনুসারী। এরা আউলিয়া বিরোধী ইবনে তাইমিয়ার ভক্ত। যে তাইমিয়া সম্পর্কে ইবনে বতুতা তাঁর ‘ভ্রমন কাহিনী’ তে উল্লেখ করেছেন, ‘ইবনে তাইমিয়া ছিল মস্তিস্ক বিকৃত’। (সূত্রঃ ইবনে বতুতার সফরনামা, মোহাম্মদ নাসির আলী, নভেম্বর ১৯৬৮, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, অধ্যায়-এক, পৃষ্ঠা-২৮-২৯)
No comments