সেজদা কাকে বলে..? কত প্রকার ও কি কি? কোরান হাদীসের আলোকে তাজিমী সেজদাঃ
সেজদা (سَجْدَةٌ) অর্থ: মাথা নত করা, নিজেকে ছোট করে রাখা।
ইসলামী পরিভাষায়:
সেজদা হল এমন একটি ইবাদত, যেখানে কোনো ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিনয় ও আত্মসমর্পণের নিদর্শন হিসেবে তার মাথা, কপাল, নাক, দুই হাত, হাঁটু ও পায়ের আঙুল মাটিতে স্পর্শ করান।
➡️ কুরআনে উল্লেখ: "সেজদা কর এবং আপনার রবের নিকট সান্নিধ্য লাভ কর।" — সূরা আল-আলাক: ১৯
সিজদাতুন শব্দের অর্থ মাথা জমিনে রাখা, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে কপালকে ইবাদতের নিয়তে আল্লাহর উদ্দেশ্যে জমিনের উপর রাখা (তাফসীরে কবির, তাফসীরে জালালাইন শরীফ ও ফিকাহে আকবর দ্রষ্টব্য)। ইসলামী পরিভাষায় জমিনে মাথা ঠেকানোকে সেজদা বলে। কারণ ইসলাম ধর্মে নামাজ বা ইবাদতে এটাই সেজদার রূপ।
সেজদা কত প্রকার ও কী কী?
ইসলামী শরিয়তের আলোকে সেজদা মূলত চারটি ভাগে বিভক্ত:
১. সালাতের সেজদা (سجدة الصلاة)
-
নামাজে থাকা ফরজ রুকন।
-
প্রতিটি রাকাতে দুটি করে সেজদা পড়া আবশ্যক।
২. সেজদায়ে তিলাওয়াত (سجدة التلاوة)
-
কুরআনের নির্দিষ্ট ১৪টি আয়াতে সেজদার নির্দেশ আছে।
-
পাঠ করার সময় বা শোনা মাত্র এই সেজদা করা সুন্নত।
উদাহরণ: সূরা সাজদা (৩২:১৫)
৩. সেজদায়ে সাহু (سجدة السهو)
-
নামাজে ভুল হলে তা সংশোধনের জন্য দুইটি সেজদা।
৪. সেজদায়ে তাজিম/ইকরাম/শুকর (سجدة التعظيم أو الشكر)
➡️ এখন আমরা এর দিকেই বিস্তারিত যাচ্ছি।
সালাতের সেজদা/ইবাদতের সেজদার কিছু শর্তাবলী আছেঃ
১।সেজদার নিয়ত থাকতে হবে
২।সেজদায় তছবী জপতে হবে
৩।ওযু থাকতে হবে
৪।কিবলামুখী হতে হবে ইত্যাদি
১নং, ৩নং, ৪নং শর্ত পূরণ হলেই সেজদা পরিপূর্ণতা পাবে।সেই সেজদার মালিক একমাত্র আল্লাহ।আর তাজিমি সেজদা শুধুমাত্র আল্লাহর খাছ বান্দা তথা নবী, পয়গম্বর, আউলিয়া কেরামের জন্য।এটি তাঁদের সম্মানার্থে প্রদান করা হয় যা দোষণীয় নয়।
আল্লাহপাক সুরা সোয়াদ এর ৭২ নং আয়াতে ফেরেশতাদের এরশাদ করেছেন, " যখন আমি আদমকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার রূহু সঞ্চার করব তখন,তোমরা তাঁর প্রতি সেজদায় নত হয়ো।"
এখন প্রশ্ন হল, তাজিমী সেজদা যদি হারাম হয় তাহলে আল্লাহপাক ফেরেশতাদের হারাম কাজের নির্দেশ দিবেন? নাউজুবিল্লাহ
সুরা বাকারার ৩৪ নং আয়াতে আল্লাহপাক এরশাদ করেন, " (স্মরণ করুন) যখন আমি ফেরেশতাদের নির্দেশ দিয়েছিলাম তোমরা আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীশ ছাড়া সকলেই (তাজিমী) সেজদা করেছিল।"
অতএব যারা তাজিমী সেজদার বিরুদ্ধে তারা ইবলীশের পদাঙ্ক অনুসারী। কোরানে পাকে সুরা ইউছুফের ১০০ নং আয়াতে উল্লেখ আছে, হযরত এয়াকুব আঃ ও তাঁর অন্যান্য পুত্ররা হযরত ইউছুফ আঃ কে সেজদা দিয়েছেন। উল্লেখ্য এই সেজদা তাজিমি সেজদা।
১। মেশকাত শরীফের ৩৯৬ পৃঃ ৮ম হিঃ সালে বর্ণিত হাদিসে পাওয়া যায়,হযরত আবু খোজায়মা রঃ রাসুলে খোদা (দঃ) কে তাজিমী সেজদা করেছেন।
২। আনিসুল আরওয়াহ কিতাবে বিভিন্ন হাদিস সূত্রে পাওয়া যায় হযরত ওমর রাঃ, হযরত আলী রাঃ, হযরত বেলাল রাঃ রাসুলে খোদা (দঃ) কে তাজিমি সেজদা করেছেন।
No comments