Header Ads

Header ADS

হাদীসে ইয়াজুজ-মাজুজ

ইসলামের হাদীসে ইয়াজুজ-মাজুজের ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে তাদের মুক্তি, তাদের দ্বারা পৃথিবীতে সৃষ্ট বিশাল বিপর্যয়, এবং তাদের ধ্বংসের সময়ে ঈসা (আঃ)-এর আগমনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসগুলিতে ইয়াজুজ-মাজুজের প্রকৃতি, কার্যকলাপ এবং তাদের বিপদ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।

১. ইয়াজুজ-মাজুজের মুক্তি:

ইয়াজুজ-মাজুজের মুক্তি কিয়ামতের অন্যতম বড় নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। হাদীসে বলা হয়েছে যে, তাদের মুক্তির পর পৃথিবীজুড়ে অশান্তি ও বিপর্যয় শুরু হবে। তারা খুব দ্রুত পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং পৃথিবীর সকল সম্পদ, পানি ও খাদ্য সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেবে। একাধিক হাদীসে তাদের সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে:

"ইয়াজুজ-মাজুজ যখন বের হবে, তারা পৃথিবীজুড়ে অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং তারা যেখানেই যাবে, সেখানেই ধ্বংসের পথ সৃষ্টি করবে।" (সহীহ মুসলিম)

২. ইয়াজুজ-মাজুজের সংখ্যা:

হাদীসে তাদের সংখ্যা এত বিশাল বলা হয়েছে যে, তারা যে কোনো দেশের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠবে। তারা এত বিপজ্জনক যে, তাদের আগমনের পর পৃথিবী সারা বিশ্বে এক বিশাল বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। তারা একদিনে একাধিক দেশ দখল করতে সক্ষম হবে।

"ইয়াজুজ-মাজুজের সংখ্যা অত্যন্ত অনেক। তারা পৃথিবীজুড়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করবে।" (সহীহ বুখারি)

৩. ইয়াজুজ-মাজুজের কার্যকলাপ:

তাদের কার্যকলাপ হবে ধ্বংসাত্মক, এবং তারা যে কোনো স্থানে গিয়ে জলাধার, কৃষি এবং সব ধরনের সম্পদ নষ্ট করবে। তারা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে যে পৃথিবীর কোনো স্থানে তাদের ক্ষতি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।

৪. মক্কা ও মদিনার উপর হামলা:

ইয়াজুজ-মাজুজের আগমনের সময় তারা মক্কা এবং মদিনা শহরগুলোকে ঘেরাও করবে। তাদের বিপদ সৃষ্টির সময় মক্কা ও মদিনা একেবারে অরক্ষিত হয়ে পড়বে এবং তারা এই শহরগুলোর ওপর আক্রমণ চালাবে।

"ইয়াজুজ-মাজুজ মক্কা ও মদিনাকে ঘেরাও করবে, কিন্তু আল্লাহ তাদের জন্য সাহায্য পাঠাবেন।" (সহীহ মুসলিম)

৫. ইয়াজুজ-মাজুজের বিপদের সময় ঈসা (আঃ)-এর আগমন:

হাদীসে বলা হয়েছে, যখন ইয়াজুজ-মাজুজ পৃথিবীজুড়ে অশান্তি সৃষ্টি করবে, তখন হযরত ঈসা (আঃ) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন। আল্লাহর সাহায্যে তিনি তাদের ধ্বংস করবেন। ঈসা (আঃ)-এর আগমনের উদ্দেশ্য হবে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং ইয়াজুজ-মাজুজকে ধ্বংস করা।

"যখন ইয়াজুজ-মাজুজ বের হবে, তখন ঈসা (আঃ) তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন এবং আল্লাহর সাহায্যে তাদের ধ্বংস করবেন।" (সহীহ মুসলিম)

৬. ঈসা (আঃ)-এর বিজয় এবং পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা:

ইয়াজুজ-মাজুজের ধ্বংসের পর ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বিশাল কর্মসূচি গ্রহণ করবেন এবং পৃথিবী শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল হয়ে উঠবে।

"ঈসা (আঃ)-এর আগমনের পর পৃথিবী শান্তিপূর্ণ হবে এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে।" (সহীহ মুসলিম)

৭. ঈসা (আঃ)-এর সাথে ইয়াজুজ-মাজুজের সংলাপ:

ইয়াজুজ-মাজুজের আগমনের পর, ঈসা (আঃ) তাদের বিরুদ্ধে দোয়া করবেন, এবং আল্লাহ তাদের ধ্বংসের জন্য এক বিশেষ ব্যবস্থা নেবেন। এক ধরনের পরজীবী বা পোকা সৃষ্টি করে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করবেন এবং পৃথিবীজুড়ে তাদের লাশ পড়ে থাকবে।

"ঈসা (আঃ)-এর দোয়ার পর, আল্লাহ ইয়াজুজ-মাজুজের কাঁধ থেকে এক ধরনের পোকা সৃষ্টি করবেন, যার মাধ্যমে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।" (সহীহ মুসলিম)

উপসংহার:

হাদীসে ইয়াজুজ-মাজুজের কাহিনি কিয়ামতের বড় চিহ্ন হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। তাদের মুক্তি পৃথিবীজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আল্লাহর সাহায্যে ঈসা (আঃ) তাদের ধ্বংস করবেন, যা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার সূচনা হবে। ইয়াজুজ-মাজুজের বিপদ এবং ঈসা (আঃ)-এর বিজয় মুসলিমদের জন্য একটি শিক্ষা এবং সতর্কবার্তা।


No comments

Powered by Blogger.