কুরআনে ইয়াজুজ–মাজুজ
ইসলামে ইয়াজুজ এবং মাজুজ একটি বিপর্যয়কর জাতি হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে যারা কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে বিশাল অশান্তি সৃষ্টি করবে। তাদের কাহিনির উল্লেখ কুরআনে দুটি স্থানে পাওয়া যায়, যা তাদের মুক্তির সময় এবং তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রদান করে।
১. সূরা কাহাফ (১৮:৯৩-৯৯):
কুরআনের এই আয়াতে দুল-কারনাইন (যাকে কিছু মুসলিম ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট হিসেবে চিহ্নিত করেন) এর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। তিনি একটি বিপদজনক জাতি, ইয়াজুজ-মাজুজ, সম্পর্কে জানতে পারেন যারা পৃথিবীজুড়ে অশান্তি সৃষ্টি করছিল। এক সময়, ওই জাতি তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে বিপদে পড়ে, এবং তারা ধ্বংসাত্মকভাবে মানুষের জীবন নষ্ট করছিল। তাদের থেকে রক্ষা পেতে, সেই অঞ্চলের মানুষ দুল-কারনাইনকে অনুরোধ জানায়, যাতে তিনি তাদের জন্য একটি বাধা তৈরি করেন।
দুল-কারনাইন এক মহান শক্তি ও আল্লাহর সাহায্য নিয়ে একটি বিশাল বাধা তৈরি করেন। এই বাধাটি ছিল লোহার এবং তামার মিশ্রণে গঠিত, এবং এতে গলিত তামা ঢেলে দেয়া হয়েছিল যাতে তারা পার না হতে পারে। কুরআনে এই ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে:
"সে (দুল-কারনাইন) বলল, আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তা-ই যথেষ্ট। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব।" (সূরা কাহাফ, আয়াত: ৯৪)
এভাবে, একটি প্রাচীর তৈরি করা হয় যা ইয়াজুজ-মাজুজকে আটকে রাখে। তবে কুরআনে বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে, তখন সেই বাধাটি ভেঙে পড়বে এবং তারা পৃথিবীতে বিশাল অশান্তি সৃষ্টি করবে।
২. সূরা আল-আনবিয়া (২১:৯৬):
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে কিয়ামতের সময়, যখন ইয়াজুজ-মাজুজ বের হয়ে আসবে, তখন তারা পৃথিবীজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। কুরআনে এই আয়াতে তাদের মুক্তির ব্যাপারে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে:
"যতক্ষণ না ইয়াজুজ-মাজুজের বাধা খোলা হয় এবং তারা প্রতিটি পাহাড় থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসবে।" (সূরা আল-আনবিয়া, আয়াত: ৯৬)
এখানে বলা হয়েছে যে, তারা পৃথিবীতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করবে।
ইয়াজুজ-মাজুজের চরিত্র ও প্রকৃতি:
ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে কুরআনে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। তারা অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক, একত্রিত হয়ে পৃথিবীজুড়ে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। তারা এমন এক জাতি যা প্রচণ্ড শক্তিশালী এবং তাদের সংখ্যা অগণিত। তাদের কার্যকলাপ এত বিপর্যয়কর হবে যে, পুরো পৃথিবী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দুল-কারনাইন এবং বাধা:
দুল-কারনাইন, যিনি কুরআনে একটি মহান শাসক হিসেবে চিহ্নিত, ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে একটি শক্তিশালী বাধা তৈরি করেছিলেন। এই বাধা ছিল একটি মহান নির্মাণ যা ইয়াজুজ-মাজুজকে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে রোধ করে। কুরআন এবং হাদীসে এটি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই বাধা কিয়ামতের সময় আল্লাহর ইচ্ছায় ভেঙে যাবে এবং তারা পৃথিবীতে বিশাল বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।
উপসংহার:
ইয়াজুজ-মাজুজের কাহিনি কুরআনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ভীতিকর ঘটনা হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। তাদের মুক্তি হবে কিয়ামতের অন্যতম বড় চিহ্ন, যা পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করবে। তবে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হযরত ঈসা (আঃ) আগমন করবেন এবং আল্লাহর সাহায্যে তাদের ধ্বংস করবেন, যাতে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই কাহিনী মুসলিমদের জন্য একটি সতর্কতা এবং একথা মনে করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী পৃথিবীতে সমস্ত কিছু ঘটবে এবং অবশেষে আল্লাহর রায়ই চূড়ান্ত হবে।
No comments