Header Ads

Header ADS

মিরাজের রাতে নবীজি সা.-এর ইমামতি


সহিহ সুন্নাহতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেরাজের সফরে নবীদের ইমামতি করেছিলেন। 


ভূমিকা:

মিরাজ একটি অলৌকিক ঘটনা, যা ইসলামী ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এটি এমন একটি রাত, যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বিশেষ হুকুমে ঊর্ধ্বলোকে ভ্রমণ করেন। এই সফর ছিল দুই ধাপে—ইসরা (মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত) এবং মিরাজ (আকাশভ্রমণ ও সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত)। এই রাতেই বায়তুল মুকাদ্দাসে সমস্ত নবী-রাসূলগণ একত্রিত হন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁদের ইমাম হিসেবে নামাজ আদায় করেন।

ইমামতি ঘটনার বিবরণ:

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, নবীজি (সা.) জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছানোর পর দেখেন, সেখানে পূর্ববর্তী সকল নবী উপস্থিত। তখন জিবরাইল (আ.) নবীজি (সা.)-কে ইমামতি করতে বলেন। তিনি নামাজে দাঁড়ান, এবং সকল নবী তাঁর পেছনে কাতারবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করেন।

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি নবীদের একটি দলের মধ্যে নিজেকে দেখলাম। তখন মূসা আলাইহিস সালাম দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। তিনি লম্বা ও ঢেউ খেলানো চুলের অধিকারী ছিলেন, যেন তিনি শানুআহ গোত্রের একজন ব্যক্তি। আর ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। তিনি চেহারায় উরওয়া ইবনে মাসউদ আশ-ছাকাফির মতো ছিলেন। এবং ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। তিনি চেহারায় তোমাদের সঙ্গীর (অর্থাৎ আমার) মতো ছিলেন। তখন নামাজের সময় হয়ে গেলে আমি তাঁদের ইমামতি করলাম। (মুসলিম, হাদিস : ১৭২)

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করার পর নামাজ আদায় করতে দাঁড়ালেন। তিনি পেছনে ফিরে তাকালেন এবং দেখলেন, সমস্ত নবী নামাজে তাঁর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ: ৪/১৬৭।)

ইমামতির তাৎপর্য:

১. শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি:

নবীজি (সা.)-এর ইমামতি ছিল তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের এক সুস্পষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ তাআলা এই মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সকল নবীর নেতা।

২. নবুওতের পূর্ণতা:

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে নবুওতের ধারা পূর্ণতা পায়। তাই এই ইমামতি বোঝায় যে, ইসলামের চূড়ান্ত রূপ ও পূর্ণতা তাঁর দ্বারাই প্রকাশ পেয়েছে।

৩. উম্মতের মর্যাদা:

যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.) এই উম্মতের নবী, তাই এই উম্মতের মর্যাদাও অত্যন্ত উচ্চ। তাঁর ইমামতির মাধ্যমে তাঁর উম্মতের শ্রেষ্ঠত্বও পরোক্ষভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

নামাজের গুরুত্ব:

বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজ আদায় এবং মিরাজেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়া প্রমাণ করে, নামাজ ইসলামে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

উপসংহার:

মিরাজের রাতে নবীজি (সা.)-এর ইমামতির ঘটনা কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং এতে লুকিয়ে আছে ইসলামের মূলনীতি, নবীজি (সা.)-এর মর্যাদা এবং উম্মতের অবস্থান সম্পর্কে গভীর বার্তা। এটি বিশ্বাসীদের জন্য ঈমান দৃঢ় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।


No comments

Powered by Blogger.