Header Ads

Header ADS

শবে মেরাজের ঘটনা ও ইতিহাস

শবে মেরাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অলৌকিক রাত, যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে ঘটে যাওয়া এক বিস্ময়কর ও আধ্যাত্মিক ভ্রমণের স্মৃতিবাহী। এই রাতে মহানবী (সা.) মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস এবং সেখান থেকে আকাশমণ্ডলী অতিক্রম করে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত গমন করেন। সেখানে তিনি আল্লাহ তাআলার সাক্ষাৎ লাভ করেন। এই ঘটনার মাধ্যমেই ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়।

শব্দের অর্থ

“শব” একটি ফারসি শব্দ, যার অর্থ “রাত”।

“মেরাজ” এসেছে আরবি "উরূজ" ধাতু থেকে, যার অর্থ "উচ্চে উঠা" বা "আরোহণ করা"।

সুতরাং, শবে মেরাজ মানে হচ্ছে “আরোহণের রাত” — যে রাতে নবীজী (সা.) আসমানের উচ্চতর স্তরসমূহে আরোহণ করেন।

মেরাজের দুই ধাপ

ইসরা (রাতের সফর)

মক্কার মসজিদুল হারাম (কাবা শরীফ) থেকে জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা পর্যন্ত অলৌকিক ভ্রমণ। এটি হয় বোরাক নামক একটি বিশেষ বাহনে।

মেরাজ (উর্ধ্বগমন)

বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে সাত আসমান পেরিয়ে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত গমন এবং আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ। ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) ছিলেন তাঁর সফরসঙ্গী।

ইতিহাস ও সময়কাল

মেরাজের এই ঘটনা ঘটেছিল হিজরতের এক বছর পূর্বে, নবুয়তের ১০ম বছরে, যা ‘আমুল হুযন’ বা ‘শোকের বছর’ নামে পরিচিত। সেই বছরই মহানবী (সা.) তাঁর প্রিয় স্ত্রী খাদিজা (রা.) এবং চাচা আবু তালিবকে হারান। এই শোকাবহ সময়ে আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবীকে সান্ত্বনা দিতে এবং তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করতে এই মহামানবিক ভ্রমণে আহ্বান করেন।

সাত আসমানে নবীদের সাক্ষাৎ

মেরাজকালে মহানবী (সা.) সাত আসমানে বিভিন্ন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন:

১ম আসমানে: হযরত আদম (আ.)

২য় আসমানে: হযরত ইয়াহইয়া (আ.) ও ঈসা (আ.)

৩য় আসমানে: হযরত ইউসুফ (আ.)

৪র্থ আসমানে: হযরত ইদরিস (আ.)

৫ম আসমানে: হযরত হারুন (আ.)

৬ষ্ঠ আসমানে: হযরত মূসা (আ.)

৭ম আসমানে: হযরত ইবরাহিম (আ.)

সেখান থেকে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছান — যা সৃষ্টি জগতের শেষ সীমা। সেখানে তিনি জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করেন এবং আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন।

নামাজ ফরজের ঘটনা

মেরাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়া। প্রথমে আল্লাহ ৫০ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারণ করেন, কিন্তু নবীজি (সা.) হযরত মূসা (আ.)-এর পরামর্শে তা কমিয়ে আনতে বারবার অনুরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত তা ৫ ওয়াক্তে স্থির হয়, যা সওয়াবের দিক থেকে ৫০ ওয়াক্তের সমতুল্য।

কুরআনে উল্লেখ

“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রির কিছু অংশে ভ্রমণ করালেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি, যাতে আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”

— (সূরা আল-ইসরা: ১)

“অতঃপর সে (জিবরাইল) তার প্রকৃত রূপে তাকে দেখেছিল... সিদরাতুল মুনতাহার নিকট। যেখানে জান্নাতুল মা'ওয়া অবস্থিত।”

— (সূরা আন-নাজম: ১৩-১৫)

শবে মেরাজের শিক্ষা ও তাৎপর্য

আল্লাহর অসীম কুদরতের নিদর্শন।

নবীজির (সা.) মর্যাদার উচ্চতা।

নামাজের গুরুত্ব ও তা ফরজ হওয়ার পটভূমি।

আখিরাতের বাস্তবতা: জান্নাত-জাহান্নাম, ফেরেশতা ও হাশরের দৃশ্য।

মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, নামাজে যত্নবান হওয়া ও আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনের শিক্ষা।

উপসংহার

শবে মেরাজ শুধু একটি অলৌকিক ঘটনা নয়, বরং এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহা শিক্ষা ও আল্লাহর কুদরতের স্বাক্ষর। এই রাতে মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমে আমাদের জন্য যে উপহার এসেছে — তা হলো নামাজ। সুতরাং, শবে মেরাজ আমাদের জন্য আত্মজিজ্ঞাসা, ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক মহাসুযোগ।


No comments

Powered by Blogger.