Header Ads

Header ADS

ফরিয়াদীদের হাজত মাকছুদ পুরন ও অন্যান্য কারামাতঃ

হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) তার পীরে ত্বরিকতের নির্দেশে ১৮৫৭ সালে নিজ গ্রাম মাইজভান্ডারে ফিরে আসেন। কিছু দিনের মধ্যেই তার কামালিয়তের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঐশী-প্রেম পিপাসু সাধক ও দোয়া প্রত্যাশী ফরিয়াদিদের ভিড়ে এই সাধকের পবিত্র বাস গৃহ বিশ্ব-মানবতার কল্যাণ ধারক এক উচ্চমার্গীয় আধ্যাত্বিক দরবারে পরিণত হয়। গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) এর কিছু উল্লেখযোগ্য কামালিয়ত নিন্মোক্ত শ্রেণীতে বর্ণনা করা যেতে পারে।

ক) দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তিদান। খ) অভাব-অনটন থেকে মুক্তিদান পূর্বক অর্থনৈতিক সাফল্য প্রদান। গ) নিঃসন্তানকে সন্তান দান। ঘ) হাকিমের উপর আধ্যাত্বিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ফরিয়াদির স্বপক্ষে মোকাদ্দমার রায় প্রদান। ঙ) হযরতের আধ্যাত্বিক প্রভাবে অনভিজ্ঞ হেকিম এর হেকিম হিসেবে সুনাম অর্জন। চ) তার শুভ দৃষ্টিতে মৃত্যুকষ্ট লাঘব এবং মৃত্যুকালে ঈমান রক্ষা। ছ) পথহারা, সহায়-সম্বলহীন হাজী সাহেবকে অলৌকিকভাবে গৃহে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ করে দেয়া।

বর্ণিত শিরোনামগুলো ছাড়াও হযরত কেবলার (কঃ) অসংখ্যা কারামতের ঘটনা বিভিন্ন গ্রন্থে ও লোকমুখে প্রচারিত। ওফাতের পরও তার পবিত্র মাজার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মিলন কেন্দ্র। আজও ফরিয়াদিরা তার মাজারে এসে আপন হাজত-মাকসুদ পূরণের জন্য নজর-মানত সহ আল্লাহর দরবারে মিনতি করেন এবং তাদের চাহিদাও পূর্ণ হচ্ছে নিয়মিতভাবে যা খোদার নেয়ামত এর এক তুঙ্গীয় বহিঃপ্রকাশ। হযরত দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (রহঃ) হযরত কেবলার (কঃ) এই খোদা প্রদত্ত বিশেষত্ব বর্ণনায় বলেন, কামেলের মাজার জান সর্ব দূঃখ হারী, প্রেমিকের অন্তরে ঢালে শান্তি সুধা বারি।

ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারীর (কঃ)ঃ সমসাময়িক ও পরবর্তি সূফী ওলামায়ে কেরাম তার প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা নিবেদন ও তার গাউছিয়তের আন্তরিক স্বীকৃতি দিয়েছেন। হাফেজ মাওলানা হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ ছিরিকোটি (রহঃ) এর বর্ণনামতে “তিনি (সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) এই জামানার আওলিয়াদের সম্রাট। হুকুমত তারই”। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আমীর মাওলানা সৈয়দ আজিজুল হক শেরে বাংলা (রহঃ) তার ‘দিওয়ানে আজিজ’ গ্রন্থে হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) যে প্রশংসা বাক্য লিখেছেন তা প্রনিধান যোগ্য- “হযরত শাহ আহমদ উল্লাহ কাদেরী পূর্বাঞ্চলে প্রকাশিত কুতুবুল আকতাব। তিনি মাইজভান্ডারী সিংহাসনে অধিষ্ঠিত গাউছুল আজম (লকবধারী) বাদশাহ, যিনি উম্মতে আহমদীর জন্য হেদায়তের আলোকবর্তিকা। তার অনুগ্রহের ছায়াকে হুমা পাখির ছায়ার মতো জানো (যা দুর্ভাগাকে ভাগ্যবানে পরিণত করে), তিনি বিশ্ববাসীর জন্য লাল স্পর্শমনি সদৃশ। পয়গম্বর (দঃ) এর কাছে (বেলায়তে ওজমা বা শ্রেষ্ঠ বেলায়তের) দুটি তাজ ছিল, তার একটি হযরত শাহ আহমদ উল্লাহ এর মস্তকে সন্দেহাতীত ভাবে প্রতিষ্ঠিত। এই কারণেই তিনি পূর্বাঞ্চলে অবস্থানকারী গাউছুল আজম, তার রওজা জ্বীন, পরী, মানব (সকল) এর জন্য খোদায়ী অনুগ্রহের উৎস।

মাইজভান্ডারী ত্বরিকা প্রতিষ্ঠাঃ হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) মাইজভান্ডারী ত্বরিকা প্রতিষ্ঠা করেন। মাইজভান্ডারী ত্বরিকা কোরআন ও হাদিস ভিত্তিক ইসলামের মৌলিক ভাবাদর্শের অনুসরণে প্রতিষ্ঠিত একটি ত্বরিকা। অন্যান্য ত্বরিকার আত্মিক ও আধ্যাত্মিক বৈশিষ্টগুলো মাইজভান্ডারী ত্বরিকায় একত্রিত হয়েছে। এই ত্বরিকা ছিলাছিলার দৃষ্টিকোনে কাদেরিয়া ত্বরিকার সাথে সর্ম্পকিত। তাই এই ত্বরিকার বায়াত প্রদান কালে কাদেরিয়া ত্বরিকার উসুল অনুসরণ করা হয়। এই ত্বরিকার বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে যে, এ ত্বরিকা ইসলামী ভাবাদর্শকে পরিপূর্ণভাবে আত্বস্থ করার পাশাপাশি একই সাথে অসাম্প্রদায়িক, উদার ও সংস্কারমুক্ত, নৈতিক ধর্ম-প্রাধান্যসম্পন্ন, শ্রেণী-বৈষম্যহীন ও মানবদরদী।


No comments

Powered by Blogger.