Header Ads

Header ADS

মেরাজের রাতে নবীজি জান্নাত ও জাহান্নামে কী দেখেছিলেন

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘পবিত্র ওই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন। যার চারপাশ আমি বরকতময় করেছি, তাঁকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১)

মেরাজ একটি অলৌকিক ও আশ্চর্যজনক ঘটনা, যা ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিজরতের পূর্বে মক্কা মুকাররমায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা মিরাজের মাধ্যমে বিশেষ সম্মান দেন, যেখানে তিনি রাতের একটি অংশে মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস (বায়তুল মাকদিস) এবং সেখান থেকে সপ্তাকাশ অতিক্রম করে আরশ পর্যন্ত যান। এই মিরাজ যাত্রায় মহানবী (সা.) জান্নাত ও জাহান্নামেরও দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন।

জান্নাতের দৃশ্য

মেরাজের সময় মহানবী (সা.) জান্নাতে প্রবেশ করেন এবং সেখানে অসংখ্য আশ্চর্য ও আনন্দঘন দৃশ্য দেখেন: এ সফরে নবীজিকে জান্নাত-জাহান্নামের ভ্রমণও করানো হয়। নবীজি বলেন, জান্নাতের প্রাসাদগুলো মুক্তার তৈরি আর তার মাটি হলো মেশকের। (বুখারি, হাদিস : ৭৫১৭)

জান্নাতের সৌন্দর্য:

নবীজি (সা.) জান্নাতে প্রবেশ করে দেখেন, সেখানে এমন সব নিয়ামত রয়েছে যা চোখ কোনোদিন দেখেনি, কান কোনোদিন শোনেনি এবং মন কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)

জান্নাতবাসীরা:

তিনি দেখেন যে জান্নাতবাসীরা শান্তিতে বসবাস করছেন, স্বর্ণ-রূপার প্রাসাদে, দুধ, মধু, পানি ও শরবতের নদী বয়ে চলেছে, এবং ফলমূল তাদের কাছে নিজ থেকেই চলে আসছে।

হূর ও বালখিলান:

জান্নাতে হূররা রয়েছে, যারা অপার সৌন্দর্যময়ী, এবং আছে বালখিলান নামক তরুণগণ, যারা জান্নাতিদের সেবা করছে।

হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও শিশুদের দৃশ্য:

নবীজি (সা.) দেখেন, হজরত ইব্রাহিম (আ.) জান্নাতে শিশুদের দেখাশোনা করছেন। এতে বোঝা যায়, মুসলিম শিশু যারা অল্প বয়সে মারা যায়, তারা জান্নাতে যাবে।

হযরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে মুলাকাত হলে তিনি নবীজিকে বলেন, আপনি আপনার উম্মতের কাছে আমার সালাম পৌঁছাবেন। আর তাদেরকে বলবেন, জান্নাতের মাটি পবিত্র ও সুঘ্রাণযুক্ত, এর পানি সুমিষ্ট এবং এর ভূমি উর্বর ও সমতল। আর এর বৃক্ষ হচ্ছে- উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। অর্থ : আল্লাহ পবিত্র, সব প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ মহান। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬২)

নবীজি এ সফরে মুসা (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর শারীরিক গড়নেরও বিবরণ দেন। নবীজি বলেন, আমি ইবরাহীমের আকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৯৪)

জাহান্নামের দৃশ্য

মেরাজে নবীজি (সা.) জাহান্নামও দেখেছিলেন, যা ছিল ভয়ানক, আতঙ্কজনক এবং সতর্কতামূলক।

অবাধ্যদের শাস্তি:

তিনি দেখেন, যেসব ব্যক্তি দুনিয়াতে সুদ খেত, মিথ্যা বলত, গিবত করত বা পাপ করত – তাদেরকে বিভিন্ন ভয়াবহ শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কারো শরীর কাটা হচ্ছে, কারো মুখ আঁকা হচ্ছে, কেউ আগুনে ঝলসানো অবস্থায় রয়েছে।

নারীদের শাস্তি:

তিনি কিছু নারীদের শাস্তি দেখেন যারা অবাধ্য ছিল, স্বামীর হক আদায় করত না, গিবত করত কিংবা অশ্লীল পোশাক পরত।

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত উল্লিখিত হাদিসে আরো এসেছে, নবীজি বলেন, ‘এ ছাড়া জাহান্নামের মধ্যে ওই নারীকেও দেখতে পেলাম, যে একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল। এরপর এটাকে আহারও দেয়নি, ছেড়েও দেয়নি, যাতে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারত। শেষ পর্যন্ত বিড়ালটি ক্ষুধায় ছটফট করে মারা গেল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯০৪)

উল্লিখিত হাদিসে আরো এসেছে, ‘আমি এমন এক দল নারীর কাছে এলাম, সাপ যাদের স্তনে দংশন করছে। আমি বললাম, এদের কী হয়েছে? সে বলল, এসব নারী তাদের সন্তানদের দুধ পান করতে বাধা দিত।’ (মুসতাদরিকে হাকিম, হাদিস : ২৮৩৭)

নখ দিয়ে মুখ আঁচড়ানো:

তিনি এমন লোক দেখেন, যারা তামার নখ দিয়ে নিজেদের মুখ ও বুক আঁচড়াচ্ছে। জিবরাঈল (আ.) বলেন, তারা গিবতকারী, যারা মানুষের মানহানি করত। এরা ওই সমস্ত লোক, যারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের সম্ভ্রমে আঘাত হানত। অর্থাৎ গীবত করত এবং মানুষকে লাঞ্ছিত করত। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৩৩৪০; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৮)

মিথ্যা বলা : 

হাদিসে আরো এসেছে, তারপর চিত হয়ে শোয়া এক ব্যক্তির কাছে পৌঁছলাম। এখানে দেখলাম এক ব্যক্তি লোহার আঁকড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর সে তার চেহারার একদিকে এসে এর দ্বারা তার কশ থেকে মাথার পেছনের দিক পর্যন্ত এবং একইভাবে নাকের ছিদ্র থেকে মাথার পেছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে চোখ থেকে মাথার পেছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলছে। তারপর লোকটি শোয়া ব্যক্তির অপর দিকে যাচ্ছে এবং প্রথম দিকের সঙ্গে যেরূপ আচরণ করেছে অনুরূপ আচরণ অন্য দিকের সঙ্গেও করছে। ওই দিক থেকে অবসর হতে না হতেই প্রথম দিকটি আগের মতো ভালো হয়ে যাচ্ছে। তারপর আবার প্রথমবারের মতো আচরণ করছে। ...সে হলো ওই ব্যক্তি যে সকালে আপন ঘর থেকে বের হয়ে এমন মিথ্যা বলে, যা চতুর্দিক ছড়িয়ে পড়ে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৪৭)

ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণীর দল:

নবীজি আরো বলেন, ‘আমরা চলতে চলতে (তন্দুর) চুলার মতো একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। সেখানে শোরগোল ও নানা শব্দ ছিল। আমরা তাতে উঁকি মেরে দেখলাম, তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী-পুরুষ আছে। আর নিচ থেকে নির্গত আগুনের লেলিহান শিখা তাদের স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদের স্পর্শ করছে, তখনই তারা উচ্চরবে চিৎকার করে উঠছে। ...তারা হলো ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণীর দল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৪৭)

সুদখোর : 

উল্লিখিত হাদিসে আরো এসেছে, আমরা চলতে লাগলাম এবং একটি নদীর কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। নদীটি ছিল রক্তের মতো লাল। আর দেখলাম, সেই নদীতে এক ব্যক্তি সাঁতার কাটছে। আর নদীর তীরে অন্য এক ব্যক্তি আছে এবং সে তার কাছে অনেক পাথর একত্র করে রেখেছে। আর ওই সাঁতাররত ব্যক্তি বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর সেই ব্যক্তির কাছে ফিরে আসছে, যে তার কাছে পাথর একত্র করে রেখেছে। সেখানে এসে সে তার সামনে মুখ খুলে দিচ্ছে এবং ওই ব্যক্তি তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তারপর সে চলে গিয়ে আবার সাঁতার কাটছে এবং আবার তার কাছে ফিরে আসছে। আর যখনই ফিরে আসছে তখনই ওই ব্যক্তি তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ... সে হলো সুদখোর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৪৭)

মেরাজের শিক্ষা

মেরাজের মাধ্যমে নবীজি (সা.)-কে জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখানো হয় যেন তিনি উম্মতকে সতর্ক করতে পারেন। এটি মুসলমানদের জন্য একটি বড় শিক্ষা — আল্লাহর আদেশ পালন করলে জান্নাতের পুরস্কার, আর অবাধ্য হলে জাহান্নামের শাস্তি।


No comments

Powered by Blogger.