ষষ্ঠ কালেমা কালেমা-ই-রুদ-ই-কুফর
কালেমা-ই-রুদ-ই-কুফর ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাক্য বা উক্তি, যা অবিশ্বাস, শিরক, এবং সকল প্রকার ধর্মীয় বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের অংশ, যেখানে একজন মুসলিম তাঁর ঈমান ও বিশ্বাসের দৃঢ়তা প্রমাণ করেন এবং অবিশ্বাসীদের প্রত্যাখ্যান করেন।
ষষ্ঠ কালেমা কালেমা-ই-রুদ-ই-কুফর এর মূল শব্দ: اَللَّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْءً وَأَنَا أَعْلَمُ بِهِ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ بِهِ تُبْتُ عَنْهُ وَتَبَرَّأَتُ مِنَ ٱلْكُفْرِ وَٱلشِّرْكِ وَٱلْكِذْبِ وَٱلْغِيبَةِ وَٱلْبِدْعَةِ وَٱلنَّمِيمَةِ وَٱلْفَوَاحِشِ وَٱلْبُهْتَانِ وَٱلْمَعَاصِي كُلِّهَا وَأَسْلَمْتُ وَأَقُولُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ ٱللَّٰهِ
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন উশরিকা বিকা শাইআও ওয়ানা আলামু বিহি ওয়াস্তাগফিরুকা লিমালা আলামু বিহি তুবতু আনহু ওয়া তাবাররাতু মিনাল-কুফরি ওয়াশ-শিরকী ওয়াল-কিজবি ওয়ালা-গিবাতি ওয়াল-বিদাতি ওয়ান্না-মিমাতি ওয়াল-ফাওয়া হিমি ওয়াল-রুহতানী ওয়াল-মাআসি কুল্লিহা ওয়াসলামতু ওয়াকুলু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।
এটি বাংলায় অনুবাদ করলে: হে আল্লাহ নিশ্চয়, ক্ষমা চাই শিরক করা থেকে (আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা), আমি ক্ষমা চাই সকল পাপ থেকে যা সম্পর্কে আমি সচেতন নই বা জানি না, আমি পুনরায় ঘোষণা করছি, আমি সকল প্রকার কুফর থেকে, শিরক থেকে, মিথ্যা (কথা বলা), গিবত (কারও অনুপস্থিতিতে পরনিন্দা), বিদাত, পরনিন্দা, অশ্লীলতা এবং অন্যান্য সকল পাপ থেকে মুক্ত। আমি ইসলাম স্বীকার এবং বিশ্বাস করি এবং ঘোষণা দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত রাসুল।
কালেমা-ই-রুদ-ই-কুফর এর অর্থ ও গুরুত্ব:
"কালেমা-ই-রুদ-ই-কুফর" বা অবিশ্বাসীদের প্রত্যাখ্যানমূলক বাক্য ইসলামে এমন এক বাক্য যা মুসলমানদের জন্য শিরক, কুফর, বিদ'আত এবং জাহিলিয়াত থেকে নিজেদের রক্ষা করার অঙ্গীকার হিসেবে ধরা হয়। এটি কেবল একটি ধর্মীয় বাক্য নয়, বরং এটি একটি জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে একজন মুসলিম তার বিশ্বাসের প্রতি দৃঢ়তা এবং পূর্ণ সতর্কতা গ্রহণ করেন।
এই কালেমার মাধ্যমে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় যে, তিনি সকল প্রকার অবিশ্বাস, যেমন আল্লাহকে ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিকর্তা বা উপাস্য মানা, শিরক (অলৌকিকতার বিশ্বাস) বা বিদ'আত (ধর্মীয় নবীজীবনের পরে সৃষ্ট নতুন ধারণা বা প্রথা) থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে চান।
কালেমা-ই-রুদ-ই-কুফরের মূল বক্তব্য:
প্রাথমিকভাবে, এই বাক্যটি কুফর (অবিশ্বাস) এবং শিরক (অলৌকিক কর্মকাণ্ডে বিশ্বাস) থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার সংকল্প করে। এটি মুসলিমের মধ্যে একটি আত্মবিশ্বাস এবং ঐক্য সৃষ্টি করে যা তাকে ইসলামের প্রতি আনুগত্য এবং বিশ্বাসে একীভূত করে।
এটি একধরণের প্রতিজ্ঞা, যেখানে বলা হয় যে:
অবিশ্বাস (কুফর) এবং শিরককে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হবে।
ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মীয় বিশ্বাস গ্রহণ করা হবে না।
আল্লাহর একত্বের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস থাকবে এবং তিনি ছাড়া অন্য কাউকে উপাস্য বা সৃষ্টিকর্তা মেনে নেয়া হবে না।
কীভাবে এটি ব্যবহার করা হয়:
এই কালেমাটি সাধারণত বিশেষ পরিস্থিতিতে উচ্চারিত হয়, বিশেষত যখন কোনো মুসলিম ধর্মীয় বিভ্রান্তি বা অন্য কোন ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন। এটি একজন মুসলিমের মাঝে আত্মবিশ্বাস এবং ঈমানের দৃঢ়তা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে বলা হয়। নামাজের পর বা বিশেষ সময়গুলোতে এটি উচ্চারণ করে মুসলিমরা তাদের বিশ্বাসের প্রতি আনুগত্য পুনঃপ্রতিজ্ঞা করেন।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ:
১. শিরক থেকে মুক্তি: মুসলমানদের জন্য শিরক বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে উপাস্য বা সৃষ্টিকর্তা মানা অত্যন্ত গুরুতর গুনাহ। "কালেমা-ই-রুদ-ই-কুফর" এই বিশ্বাসকে পুরোপুরি অস্বীকার করে।
২. ঈমানের শক্তি: এটি একজন মুসলিমের ঈমানকে আরো দৃঢ় করে এবং তার বিশ্বাসের প্রতি সতর্কতা জাগ্রত রাখে। কোনোভাবেই ইসলামের বাইরে অন্য কোন ধর্মীয় বিশ্বাস বা প্রথা গ্রহণ করা যাবে না।
৩. ধর্মীয় বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা: বিদ'আত (নতুন ধর্মীয় প্রথা) ইসলামে নিষিদ্ধ। এই কালেমা একজন মুসলিমকে নতুন বা বিচিত্র ধর্মীয় ধারণা গ্রহণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
৪. সামাজিক ঐক্য: মুসলমানরা যখন একসাথে "কালেমা-ই-রুদ-ই-কুফর" উচ্চারণ করেন, তখন তা একটি সামগ্রিক ঈমানের দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়, যা মুসলিম উম্মাহর একতার প্রতিফলন।
উপসংহার:
"কালেমা-ই-রুদ-ই-কুফর" শুধু একটি উক্তি নয়, বরং এটি ইসলামী জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা মুসলমানদের কুফর এবং শিরক থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে এবং তাদের বিশ্বাসের প্রতি সতর্কতা ও একনিষ্ঠতা জাগ্রত রাখে। এটি মুসলিমদের মধ্যে এক ধরনের আধ্যাত্মিক শক্তি প্রদান করে এবং তাদের অন্তর থেকে অবিশ্বাস ও বিভ্রান্তি দূর করে।
No comments