Header Ads

Header ADS

খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহ.)–এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী


খাজা মইনুদ্দিন হাসান চিশতী (রহ.) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান সুফি সাধক। তিনি সুফি চিশতিয়া তরিকার প্রসারক ও মানবতার মহান সেবক হিসেবে বিশ্বজুড়ে সম্মানিত।


জন্ম ও শৈশব

তিনি ১১৪১ খ্রিস্টাব্দে (৫৩৬ হিজরি) ইরানের সিস্তান প্রদেশের সানজার শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল খাজা গিয়াসউদ্দিন এবং মাতার নাম ছিল উম্মুল ওয়ারা। ছোটবেলাতেই তিনি পিতামাতাকে হারান। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি তিনি দান করে দেন গরিব-দুঃখীদের মাঝে এবং নিজে জ্ঞানার্জনের পথে আত্মনিয়োগ করেন।

জ্ঞানার্জন ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা

তরুণ বয়সে তিনি বুখারা ও সমরকন্দের বিখ্যাত বিদ্যাপীঠগুলোতে পড়াশোনা করেন এবং ইসলামী ফিকহ, তাফসির, হাদিস ও তাসাউফে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। পরে তিনি বুখারার বিখ্যাত সুফি সাধক খাজা উসমান হারওয়ানী (রহ.)–এর কাছে সুফি তরিকা ও আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দীর্ঘ সাধনার পর তাঁর পীর-মুরশিদ তাঁকে খেলাফত প্রদান করেন এবং ভারতবর্ষে ইসলামের সেবা ও দাওয়াতের দায়িত্ব দেন।

হিজরত ও আজমির আগমন

খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহ.) ইসলামের শান্তির বাণী ও আধ্যাত্মিকতার আলো ছড়াতে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন—মক্কা, মদিনা, বাগদাদ, হারওয়ান, নিশাপুর প্রভৃতি। অবশেষে তিনি দিল্লি হয়ে আজমির শহরে পৌঁছান। সে সময় আজমির শাসক ছিল রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহান। আজমির ছিল কুফর ও শিরকের এক বড় কেন্দ্র। কিন্তু খাজা সাহেবের অদ্ভুত চরিত্র, ভালোবাসা, সহিষ্ণুতা এবং অলৌকিক ক্ষমতার কারণে হাজার হাজার মানুষ তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ইসলামে দীক্ষিত হয়।

দাওয়াত ও সমাজসেবা

তিনি জীবনভর মানবতার সেবা করেছেন। তার দরবার ছিল ধনী-গরিব, হিন্দু-মুসলিম সবার জন্য উন্মুক্ত। তিনি বলতেন:

"ভুখাদের খাওয়ানোই হলো প্রকৃত ইবাদত।" তিনি মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন, মানুষকে আধ্যাত্মিক জ্ঞান দান করেন এবং অসহায়দের আশ্রয় দেন। তাঁর জীবনাদর্শ ছিল বিনয়, দয়া, সহানুভূতি এবং আত্মত্যাগের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

ইন্তেকাল

খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহ.) ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ রজব (৬৩৩ হিজরি) আজমির শরীফে ইন্তেকাল করেন। তাঁর ওফাত দিবসকে "উরস শরীফ" নামে প্রতি বছর উদযাপন করা হয়, যেখানে লাখ লাখ মানুষ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এসে তাঁর প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী

"যে মানুষকে ভালোবাসে, সে আল্লাহকে ভালোবাসে।"

"ক্ষমাশীলতা হলো আল্লাহর এক মহান গুণ। তাই মানুষের ভুল ক্ষমা করা উচিত।"

"কাউকে কষ্ট না দিয়ে নিজের ইবাদত পূর্ণ হয় না।"

শেষ কথা

খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহ.) তাঁর জীবনের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন — "মানুষকে ভালোবাসো, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবে।"


No comments

Powered by Blogger.