Header Ads

Header ADS

মহানবী (সা.) যে ধরনের টুপি পরতেন


টুপি শব্দের বাংলা অর্থ হলো মস্তকাবরণ বিশেষ, শিরস্ত্রাণ। এটি মূলত সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে। টুপির বহুল পরিচিত আরবি শব্দ হলো ‘কালানসুওয়া’। এটি ‘কালসুন’ থেকে উদ্গত, এর বহুবচন হলো ‘কালানিস’। ‘কালানসুওয়া’ অর্থ শিরোভূষণ। 


মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সাধারণত টুপি বা পাগড়ি পরিধান করতেন, যা ছিল তাঁর পরিচ্ছদের অংশ। হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়, তিনি একটি সাদা টুপি পরতেন, এবং কখনো এর উপর পাগড়ি জড়াতেন। সেই সময়ের আরব সমাজে এটি ছিল সম্মানজনক ও পরিচিত পোশাকের অংশ। টুপি ছিল এমনভাবে বানানো, যা মাথা ঢেকে রাখত এবং অনেক সময় তাঁকে মাথার ঘাম থেকে রক্ষা করত। টুপি পরা ছিল তাঁর সুন্নাহর অংশ, এবং অনেক সাহাবিও এটি অনুসরণ করতেন। আজও মুসলিম সমাজে টুপি পরাকে নবীর সুন্নাহ হিসেবে গণ্য করা হয়।

 ইসলামের সর্বশেষ রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য আদর্শ। তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি দিকেই ভারসাম্যপূর্ণ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত আচরণ উপস্থাপন করেছেন। তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদেও ছিল নম্রতা, পরিশীলন ও ইসলামি আদর্শের প্রতিফলন। নবীজি (সা.) সাধারণত টুপি পরিধান করতেন, যা ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবনের পরিচিত অংশ।

আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় টুপি পরিধান করতেন। সাহাবায়ে কেরাম থেকেও টুপি পরিধানের প্রমাণ পাওয়া যায়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) সফর অবস্থায় কানটুপি পরতেন, আর আবাসে পরতেন শামী টুপি।’ -(আখলাকুন নবি, হাদিস: ৩১৪)

সুলাইমান ইবনে আবি আবদিল্লাহ বলেন, আমি প্রথম সারির মুহাজিরগণকে দেখেছি তাঁরা সুতির পাগড়ি পরিধান করতেন। কালো, সাদা, লাল, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি রংয়ের। তারা পাগড়ির কাপড় মাথায় রেখে তার উপর টুপি রাখতেন। অতপর তার উপর পাগড়ি ঘুরিয়ে পরতেন। -(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১২/৫৪৫)

নবীজির (সা.) টুপি পরিধানের অভ্যাস

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. কোনো সময় সাদা টুপি পরতেন। (আখলাকুন্নাবী, ৩০৩) 

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সা.-কে শামে (সিরিয়ায়) তৈরি সাদা টুপি পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। (আখলাকুন্নাবী, ৩০৪) 

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, সফরে নবীজি সা. এমন টুপি পরিধান করতেন যা দ্বারা কান ঢাকা যায় এবং বাড়িতে অবস্থানকালে শামে তৈরি (সাধারণ) টুপি পরিধান করতেন। (আখলাকুন্নাবী, ৩০৫)

হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ আছে যে, নবীজি (সা.) টুপি পরতেন এবং অনেক সময় সেই টুপির উপর পাগড়িও জড়াতেন। টুপি পরা ছিল তাঁর ব্যক্তিগত অভ্যাস, এবং তা তাঁর পোশাকের শালীনতা ও সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলত।

ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ জাদুল মা’আদ–এ বলেন: "নবীজি (সা.) একটি টুপি পরতেন, যার উপর তিনি মাঝে মাঝে পাগড়ি পরতেন। কখনো টুপি ছাড়া শুধু পাগড়ি পরতেন, আবার কখনো টুপি ও পাগড়ি একসাথে পরতেন।"

হাদীস শরীফে এসেছে: আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন: “নবী (সা.) একটি সাদা রঙের টুপি পরতেন।”

— (আবু দাউদ, বায়হাকি, আল-মুআমালাতুল মুহাম্মাদিয়া)

টুপি পরার ইসলামি তাৎপর্য

নবীজি (সা.)-এর এই অভ্যাসকে অনুসরণ করে সাহাবায়ে কেরামরাও টুপি পরতেন। তাই মুসলিমদের মধ্যে টুপি পরিধান করা একটি গ্রহণযোগ্য সুন্নাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও টুপি পরা ফরজ বা ওয়াজিব নয়, তবে এটি সুন্নাহ ও আদবের একটি অংশ হিসেবে দেখা হয়। বিশেষ করে নামাযে টুপি পরিধান করা ইসলামী ঐতিহ্যের অন্যতম রূপ।

টুপির ধরন

নবীজি (সা.)-এর সময়কার টুপি ছিল সাধারণত সাদা, সুতির তৈরি, এবং মাথার সাথে ভালোভাবে লেগে থাকত। এটি ছিল খুব সরল ও বিনয়ী আকৃতির। আজকের সময়ে বিভিন্ন মুসলিম জাতিগোষ্ঠী ও অঞ্চলের মাঝে টুপির নানা ধরণ দেখা গেলেও, মূল আত্মা হচ্ছে বিনয় ও সুন্নাহর অনুসরণ।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা.-এর তিন প্রকার টুপি ছিল। সাদা তুলার আস্তরণ বিশিষ্ট টুপি, ডোরাদার ইয়ামানী চাদরের মাধ্যমে নির্মিত টুপি এবং কান ঢাকা যায় এমন টুপি, যা তিনি সফরের সময় পরতেন এবং কখনো কখনো নামাজ পড়ার সময় সেটিকে সামনে রেখে দিতেন। (আখলাকুন্নাবী, ৩০৬) 

উপসংহার

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর টুপি পরিধানের এই অভ্যাস শুধু একটি পোশাক নয়, বরং তা একটি সুন্নাহ যা বিনয়, শালীনতা এবং ইসলামি সংস্কৃতির পরিচায়ক। যারা এই অভ্যাসকে অনুসরণ করে, তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন।


No comments

Powered by Blogger.