Header Ads

Header ADS

মুসলিম দেশগুলোর হাতে বিপুল অস্ত্রশক্তি, বিপুল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তারা নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য কিছু করে না কেন?

 

 আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেনমুসলিম দেশগুলোর হাতে বিপুল অস্ত্রশক্তি, বিপুল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তারা নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য কিছু করে না কেন? কেন তারা শুধু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে? এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে মাত্র একশো বছর আগের ইতিহাসে দেখতে হবে, মুসলিম উম্মাহ কিভাবে সেদিন বিশ্বকে নেতৃত্ব দিত এবং কীভাবে এক গভীর ষড়যন্ত্রের জালে আটকে পড়েছে আজ

একসময় বিশ্ব শাসন করত মুসলিমরাউসমানী খিলাফতের ছায়ায়, সেলজুক সালতানাতের দাপটে, সালাউদ্দিন আইয়্যুবির ঈমানি বজ্র হুংকারে সুলতানরা শুধু বীরই ছিলেন না, তারা ছিলেন আধ্যাত্মিকতার অনুগামী

সালাহউদ্দিন আইয়্যুবি (রহ.) ছিলেন গাউসুল আযম শাইখ আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর মুরিদ

হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) যুদ্ধের সময় নিজের পাগড়ির নিচে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মোবারক চুল রাখতেন, সেই রুহানিয়্যত ফয়েজই তাকে করেছিলেনসাইফুল্লাহ

এইভাবেই বীরত্ব, রুহানিয়্যত আর নেতৃত্বের সমন্বয়ে গড়া হয়েছিল মুসলিমদের জয়যাত্রা

কিন্তু পশ্চিমারা জানতএই চেতনা ভেঙে না দিলে মুসলিমদের দমন করা সম্ভব নয় তাই বহু যুদ্ধেও পরাস্ত হতে না পেরে তারা কৌশল পরিবর্তন করল মুসলিমদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করতে তারা একটি নতুন মতবাদ দাঁড় করায়—‘ওহাবিবাদ

এই মতবাদের জন্মদাতা আব্দুল ওহাব নজদীযার উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের সুন্নি আকিদা আধ্যাত্মিক চর্চাকে 'শিরক' বলে ফতোয়া দিয়ে ধ্বংস করা এবং রাসূল করীম সাল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান আজমত আলোচনাকেও বিদাআতের ফতোয়া দিতেও অন্তর কেঁপে ওঠে নি

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু পূর্বেই সতর্ক করে বলেছেন, “নজদ থেকে শয়তানের শিং বের হবে

এই 'নজদ'– আজকের 'রিয়াদ' বাস্তবতা আমাদের চোখের সামনেএই অঞ্চল থেকেই বের হয়েছে এমন এক মতবাদ, যা উম্মাহকে বিভক্ত করেছে, মুসলিমদের ইহুদী-নাসারাদের খেলনার পুতুলে পরিণত করেছে

তাদের মদদ দেয় ব্রিটিশ, ফরাসি, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদীরা কেবল ফতোয়ার খেলাই না, এই মতবাদকে ছড়িয়ে দিতে বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে গোটা দুনিয়ায় এক ভয়ঙ্কর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন শুরু করে

তাদের প্রচারনায় বলা হয়পীরের কাছে যাওয়া শিরক, ওলিদের কবর জিয়ারত শিরিক, দরুদ-সালাম বিদাআত অথচ এসবই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবাদের জীবনের অংশ

কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে নাআল্লাহ্ বলেন, "আমার ওলিদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না" (সূরা ইউনুস: ৬২)

তিনি বলেন, "তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গী হয়ে যাও" (সূরা তাওবা: ১১৯)

আমরা প্রতিদিন ফাতিহা শরীফে পড়ি—"আমাদের পথ দেখাও তাদের পথ, যাদের উপর তোমার অনুগ্রহ হয়েছে"

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণের জন্য প্রথম কাজওহাবি মতাদর্শের রাজনৈতিক দখলদারিত্ব থেকে আরব ভূমিকে মুক্ত করা

যতদিন না ওহাবি নেতৃত্ব ক্ষমতা থেকে সরে, মুসলিমরা রুহানিয়্যত ওলিয়ায়ে কেরামের আদর্শে না ফিরবে, ততদিন পর্যন্ত এই অবনমন চলতেই থাকবে

ওহাবিরা মক্কা-মদিনা দখল করে প্রথমেই বুলডোজার চালায় সাহাবা কেরাম আউলিয়া কেরামের মাজারে ইতিহাস ধ্বংস করে দেয়ার এই ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য ছিলমুসলিমদের নিজেদের অতীত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যেন তারা কখনো বুঝতেই না পারেতাদের আসল পরিচয় কী ছিল

এরপরে তারা রাজনৈতিকভাবে মুসলিম দেশগুলোকে বিভক্ত করতে থাকে সৌদি আরবকে মঞ্চ বানিয়ে পশ্চিমা মদদে গোটা মুসলিম দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেয় বিভক্তির বিষ সালাফি, দেওবন্দি, তাওহিদী জনতানানান নামে এই মতবাদ ছড়াতে থাকে তারা ইসলামের নাম নিয়ে এমন এক কাঠিন্য আর ঘৃণার বীজ বপন করে, যার ফলশ্রুতিতে মুসলিম মুসলিমকেই কাফের বলতে শুরু করে

এই বিভক্তি শুধু মতবাদের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকেনিসরাসরি রাজনীতিতে ঢুকে পড়ে জঙ্গিবাদের নামে মুসলিমদের আত্মঘাতী বানিয়ে, মসজিদে বোমা মেরে, কবর ধ্বংস করে, এমনকি মাজারে হামলা চালিয়ে গোটা মুসলিম জাতিকে উগ্র জঙ্গিবাদী হিসেবে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করে পশ্চিমারা এই সুযোগেসন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধনাম দিয়ে মুসলিম দেশগুলোতে হামলা চালায়ইরাকে সাদ্দাম, লিবিয়ায় গাদ্দাফি, সিরিয়ায় সহসবাইকে সরিয়ে তাদের পছন্দের পুতুল সরকার বসিয়ে দেয়

যে দেশগুলো ওহাবি মতবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, সেসব দেশের আধ্যাত্মিক সুন্নি নেতাদের একে একে নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্ত চলে আজ সুন্নি নেতৃত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে

আজকের বাস্তবতা এইযে মুসলিম জাতি একসময় চোখ রাঙিয়ে কথা বলত বিশ্ববাসীর সঙ্গে, আজ সে জাতি চোখের পানি ফেলছে, মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না ওহাবি মতবাদ শুধু মুসলিমদের ঐতিহ্য, রুহানিয়্যত আকিদাকে ধ্বংস করেনিতারা মুসলিম উম্মাহকে ভেতর থেকে নিঃশেষ করে দিয়েছে

তাই আজ মুসলিমদের প্রয়োজননিজেদের অতীতের দিকে ফিরে তাকানো

প্রয়োজন সেই সুন্নি চেতনায় ফিরে যাওয়া, যেখানে সুলতানরা ওলিদের দরজায় দোয়াপ্রার্থী হতেন, সৈনিকরা রুহানিয়্যত থেকে ফয়েজ নিয়ে যুদ্ধ জয় করত, মানুষ পীর-মাশায়েখদের ছায়ায় ঈমান আমল ঠিক রাখত

যতক্ষণ না ওহাবি রাষ্ট্র ভেঙে, আরব ভূমি থেকে ওহাবি নেতৃত্ব উৎখাত না হবে, যতক্ষণ না পশ্চিমা পুতুল শাসকদের বিদায় করে সত্যিকারের ঈমানদার শাসক আসবেততদিন মুসলিম উম্মাহর জাগরণ সম্ভব নয়

এই বিষয়গুলো আরও গভীরভাবে বুঝতেব্রিটিশ গোয়েন্দার ডায়েরিবইটি পড়ুন বুঝবেনকীভাবে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ভাঙা হয়েছে

এসব লিখতে গেলে একটা বইও লেখা সম্ভব কিন্তু আমার উদ্দেশ্য শুধুই এইটুকু বোঝানোওহাবিরা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে মুসলিমরা বিশ্ব শাসন করত, আর ওহাবিরা ক্ষমতায় আসার পর মুসলিমদের শুরু হয় মার খাওয়ার ইতিহাস, বিভক্তির ইতিহাস, ফেতনার ইতিহাস

এবার সময় এসেছেএই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে মুসলিমদের হারানো সালতানাত আত্মমর্যাদা ফিরে পাওয়ার

পুরানো ইসলাম ভালো যেখানে ওয়াহাবী বলতে ইসলাম কুরআনে ছিলোনা

No comments

Powered by Blogger.