মিরাজের বাইতুল মামুর ও সিদরাতুল মুনতাহায় নবীজি
মিরাজের রাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এমনসব আশ্চর্য, পবিত্র ও আধ্যাত্মিক স্থান ভ্রমণ করেন যা মানুষের দৃষ্টির বাইরে। এই মহান সফরে তিনি বাইতুল মামুর ও সিদরাতুল মুনতাহা নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রত্যক্ষ করেন, যেগুলোর সাথে ফেরেশতা ও আখিরাতের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
বাইতুল মামুর কী?
বাইতুল মামুর হলো আকাশের সপ্তম স্তরে অবস্থিত একটি গৃহ, যা কা’বাঘরের ঠিক উপরে অবস্থিত। এটি ফেরেশতাদের কা'বা হিসেবে গণ্য হয়।
হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, "আমি সপ্তম আকাশে পৌঁছে ইব্রাহিম (আ.)-কে দেখলাম। তিনি তাঁর পিঠ ঠেকিয়ে বাইতুল মামুরে বসে আছেন।" (সহীহ বুখারী, মুসলিম)
ফজিলত: প্রতিদিন ৭০,০০০ ফেরেশতা এতে ইবাদতের জন্য প্রবেশ করে এবং একবার প্রবেশ করার পর তারা আর কখনও ফিরে আসে না — প্রতিদিন নতুন ৭০,০০০ ফেরেশতা আসে। (সহীহ বুখারী) এটি ফেরেশতাদের জন্য আল্লাহর ঘর, যেমন কা’বা আমাদের জন্য।
সিদরাতুল মুনতাহা কী?
সিদরাতুল মুনতাহা একটি বিশাল বেদখিল গাছ (বটগাছের মত), যা সপ্তম আকাশের সীমান্তে অবস্থিত। এটি সৃষ্টি জগতের চূড়ান্ত সীমা — এর পরে আর কোনো সৃষ্টি যেতে পারে না, এমনকি ফেরেশতাও নয়।
কুরআনে বলা হয়েছে: "সিদরাতুল মুনতাহার কাছে। যেখানে জান্নাতুল মা’ওয়া অবস্থিত..." (সূরা আন-নাজম: আয়াত ১৪-১৫)
এই গাছের পাতা ও ফল অত্যন্ত সুন্দর এবং বিশাল। হাদীসে বলা হয়েছে, এর সৌন্দর্য এত বেশি ছিল যে নবীজি (সা.)-এর চোখ চমকে গিয়েছিল এবং তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
নবীজি (সা.)-এর অবস্থান
✅ নবীজি (সা.)-ই একমাত্র মানুষ যিনি সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত গেছেন।
✅ সেখানে তিনি আল্লাহর সান্নিধ্যে উপনীত হন এবং ওহির গুরুত্বপূর্ণ অংশ লাভ করেন — যেমন নামাজের ফরজ আদেশ।
✅ ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.) সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নবীজির সঙ্গে ছিলেন, কিন্তু এরপর তিনি বলেছিলেন: “আমি যদি আরেক কদম অগ্রসর হই, তবে পুড়ে ছাই হয়ে যাব।” এই থেকে বোঝা যায়, সিদরাতুল মুনতাহা হচ্ছে সৃষ্টির সর্বোচ্চ সীমা।
উপসংহার
মিরাজের এই মহিমান্বিত সফরে বাইতুল মামুর ও সিদরাতুল মুনতাহা মহানবী (সা.)-এর সম্মান ও মর্যাদার অন্যতম সাক্ষ্য। এই দুটি স্থান আখিরাত ও আত্মিক জগতের রহস্যময় কেন্দ্রবিন্দু, যা আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় ও ভাবনাকে গভীর করে তোলে।
No comments